মেয়েদের পোশাক এবং ছেলেদের পর্ন দেখাই ধর্ষনের কারন!

বাংলাদেশে গত ৩৬৫ দিনে এমন একটা দিন নেই যে দিনে একটা শিশু, আই রিপিট ‘শিশু’ ধর্ষণ হয়নি! এর কারন হিসেবে যে দুটো কারন সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে তা হল, পোশাকের জন্য আসলে ধর্ষণ বাড়ছে এবং পর্ণ দেখার কারনে ধর্ষণ বাড়ছে। এক শ্রেণীর বক্তব্য হল, যেহেতু মেয়েরা পর্দা করেনা এবং ছেলেরা পর্ন দেখে তাই ধর্ষণের হার বাড়ছে।
প্রথমেই বলি পর্ন নিয়ে। যদি পর্ন দেখাই ধর্ষণের জন্য দায়ী হত, তবে যে দেশগুলো পর্ন বানায় তাদের দেশে ধর্ষণের হার এত কম কেন? ধর্ষণের ইতিহাস একটু পড়লেই জানতেন পর্ন তো মাত্র সেদিন আসল। পর্নগ্রাফী প্রচলিত হবার আগেই ভয়াবহ ধর্ষণগুলো হয়ে গেছে।
জার্মানি যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে তখন এক কোটিরও বেশি সংখ্যক সোভিয়েত নারী জার্মান সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। নানচিং গণহত্যা ইতিহাস পড়লেই জানবেন, জাপানীরা কি পরিমাণ চিনা মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল। ১৯৯১ শালে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরা গ্রামে ৩০ জনেরও বেশি নারীকে ভারতীয় সৈন্যরা ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ আছে। পাহাড়ে ধর্ষণ তো নতুন না। আর আমাদের ৭১ এ তো পর্ন ছিল না, তো কি কারনে তিন লক্ষ ধর্ষণ হল ?
পর্নগ্রাফী মানুষের ফ্যান্টাসি বাড়ায় কিন্তু পর্ন দেখে বলেই সে ধর্ষক হবে এমন কোন কথা নাই। যদি হত তবে বাংলাদেশের প্রাইভেট আর পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টদের ছেলেরা এবং একটা বিশাল অংশের মেয়েরাও ধর্ষক হয়ে যেত। আজকাল মেয়েরাও প্রচুর পর্ন দেখে কিন্তু তারা তো ধর্ষণ করতেছে না। 
এর পরও যদি বলেন, বর্তমানে ধর্ষণ হচ্ছে পর্ন দেখে, তাহলে যে বৃদ্ধ ইতোর তার নয় মাস বয়সী নাতনী কে ধর্ষণ করেছে, সে পর্ন দেখে করেছে এমন কথা বলে মাথায় গু এর উপস্থিতি জানান দিয়েন না। গু ঢেকে রাখুন প্লিজ।
দ্বিতীয় আবালীয় যুক্তি। পোশাকের জন্য আসলে ধর্ষণ বাড়ছে। বিষয়টা কি আসলেই তাই? 
এর উত্তর দেবার আগে একটা তথ্য দেই, গত ২৩ শে মে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একশ বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে ১৫ বছরের এক কিশোর।
আরও একটি তথ্য দেই, বাংলাদেশে খুব অল্প সংখ্যক হলেও পুরুষ ধর্ষণ হয়। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯% ধর্ষণের ঘটনা ঘটে পুরুষ কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের। একজন পুরুষ আর একজন পুরুষকে ধর্ষণ করে কী কারনে? পোশাকের কারনে? 
আপনার কি মনে হয় মাদ্রাসার হুজুর দ্বারা যে ছেলে বাচ্চাগুলা ধর্ষিত হইছে কিংবা খ্রিষ্টান পাদ্রী দ্বারা কিংবা বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ঘেঁটু পুত্র নামের বর্বর কালচারের বলি যে বাচ্চাগুলা ওরা পোশাকের কারনে ধর্ষিত হইছে? জি না । 
কোনটা কালচার, কোনটা ক্ষমতার আধিপত্য, কোনটা এন্টি-সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, কোনটা ধর্ম, কোনটা অশিক্ষা কোনটা ধ্বজভঙ্গতা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটও এর জন্য দায়ী ।
প্রায়ই একটা কথা শুনি যে মেয়েটা দেখি স্লাট এর মত পোশাক পরেছে। মাথায় ঢুকে গেল বিষয়টা । বেশ্যাবৃত্তি নিয়ে পড়তে শুরু করলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম স্লাটদের আসলে কোন ড্রেসকোড নেই! কিন্তু যারা বলে মেয়েটা দেখি বেশ্যাদের মত পোশাক পরেছে , এরা জানল কি করে যে বেশ্যারা কি পরে? কেন তার মনে হল এই মেয়েটাকে ধরে বিছানায় নেয়া যায়?
সাইকোলজিক্যাল দিক থেকে ভাবলে বিষয় হল মানুষ যা শেখে, ভাবে, সেটাই সে বিশ্বাস করে। খুব ছোট বেলা থেকে তাকে শেখানো হয়েছে,
– মেয়ে মানেই এলিয়েন , এরা ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী
– মেয়ে মানেই পাপ, মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দুরে থাকতে হবে ।
– মেয়েদের না মানে হল হ্যাঁ !
– মেয়ে মানেই হল চোখ নামিয়ে ফেলতে হবে।
– মেয়েদের সাথে মেশা যাবে না।মিশলেই খারাপ হয়ে যাবে।
– মেয়েদের স্তন্য মানেই হল খাইতে হবে।
– মেয়ে শরীর মানেই হল খাওয়ার জিনিষ।
– মেয়ে হল খাবার আর পোলা হল মাছি। খাবারে মুখ দেয়াই তো মাছির কাজ।
– মেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক, শিল্পী যাই হোক না কেন, যে মেয়ের কাপড় যত লম্বা সে মেয়ে তত ভদ্র।
সুতরাং মেয়ের পীঠ দেখা গেলেই পোলার মনে হয়, পীঠ যেহেতু দেখাইছে সেহেতু মেয়ে তো বিছানায় যাবার জন্যই পীঠ দেখায়। কোমর দেখা গেছে মানে মেয়ে বিছানায় যাবে। হিজাব পরছে কিন্তু ঠোটে লিপস্টিক মানেই হল মেয়ে বিছানায় যাবে। মেয়ে টিশার্ট পরছে মানে হল তার বুকে চাপ দেয়া যায়। মেয়ে কোন পোশাক পরে নাই তার মানে হল পুরাই রেপ করে দেয়া যাবে।
অথচ ছেলে যখন গোসলের ছবি পোস্ট করে তখন কোন মেয়ে ভাবে না যে এই ছেলে কে রেপ করে দেয়া যাবে । কারন মেয়েরা ছেলেদের সেক্স অবজেক্ট জেনে বড় হয় না। পোলা মানেই মাল , কিংবা পোলা মানেই খেতে হবে এমন কথা তারা জেনে শিখে বড় হয় না বলেই কোন ছেলে খালি গায়ে বের হলে তার পোশাক মেয়েদের কাছে স্লাট কিংবা তাকে বেশ্যা লাগে না ।
সমস্যাটা মানসিকতায়। সমস্যাটা গোড়ায়। মেয়ে কে যেমন শেখানো হয় না যে ছেলে মানেই একটা শরীর , একটা সেক্স অবজেক্ট তেমন করে যদি ছেলে কে শেখানো হয় যে, মেয়ে মানেই তোমার মত মানুষ, তার স্তন্য কোন বিশেষ অঙ্গ না, সেটা হাত পায়ের মত স্বাভাবিক অঙ্গ। ছেলে মেয়ে এক সাথে মেশা এবং সম অধিকার নিয়ে বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক , ছেলে মেয়ে উভয় কেই মানুষ হিসেবে সম্মান করতে হবে , তবে ছেলেরা মেয়েদের স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবে।
এর পরেও রেপের বিভিন্ন কারন আছে কিন্তু শুধু দৃষ্টি ভঙ্গি আর শিক্ষার কারনে উন্নত দেশগুলোতে রেপের হার এত কম, সেই শিক্ষা থেকে বোঝা যায় আমরা যদি ওদের এই দিকটা ফলো করি তবে আমাদের দেশেও রেপের হার ওদের মত অনেক কমে যাবে। ভাবুন প্লিজ , কারন সন্তান আপনার, আত্মীয় আপনার, দেশটাও আপনার , ক্ষতিটাও আপনারই হবে। ক্ষতিটা আমাদের হচ্ছে।

Comments

Popular posts from this blog

থটস আর অনলি থটস নট ফ্যাক্টস

বাতাসে আবারও রেকর্ড সংখ্যক কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কোন পথে এগোচ্ছে পৃথিবী?

ফেইসবুক, ভুয়া খবর, এবং রাজনৈতিক সামাজিক বিপর্যয়