'অহংকার'
(লিখেছেন আমার ভাই: জার্মানি প্রবাসী ব্লগার)
আমি জার্মানীতে আছি অনেক দিন। যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানেই ২৭ বছর হয়ে গেল । কোনো একটি অকেশনে আমাদের কোম্পানির সব কর্মচারী একসাথে বসে খাচ্ছিলাম। কথায় কথায় প্রসঙ্গ এল, কে বছরে কত দিন অসুস্থ থাকে । কেউ বললেন এক সপ্তাহ, কেউ বললেন শুধু ক্রিসমাসের সময়। জার্মানিতে ক্রিসমাসে কয়েক দিন অফিশিয়ালি বন্ধ। তার সাথে যদি কয়েক দিন সিক রিপোর্ট নেয়া যায়, তাহলে তো পোয়াবারো। অনেকে তা-ই করেন।
আমি হঠাৎ বোকার মতো বলে ফেললাম, ‘আমি কোনো দিনই অসুস্থ হইনি।’
অনেকটা বজ্রপাতের মতো। কেউ বিশ্বাস করলেন না আমার কথা।
কোম্পানির মালিক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ২৭ বছরে কোনো দিন অসুস্থ হননি, এটা অবিশ্বাস্য।’ আমি বললাম, ‘এটা সত্যি।’ কয়েকজন কলিগ বাজি ধরা শুরু করলেন। এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়।
আমাদের অ্যাকাউন্টস বিভাগের কম্পিউটারে খোঁজা হলো। উত্তর বের হলো, সত্যিই তাই। আমি গর্ব করে সবার দিকে তাকালাম। এটাই আমার কাল হয়েছিল।
এর দু’দিন পর হঠাৎ করে আমার পায়ে ব্যথা শুরু হলো। একটানা আটটি মাস আমি অসম্ভব কষ্ট পেয়েছি।
পাঠক, এবার বুঝুন, অহংকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না। বাইবেলে যে সাতটি চরম পাপ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ, তার প্রথমটি হলো অহংকার ।
অহংকার এমন একটি জিনিস, শুধু এই কারণে রোমান সভ্যতা গুঁড়িয়ে গেছে ।
জার্মানরা দু’দুবার মহাযুদ্ধে হেরেছে। হিটলারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল।
পাঠক, আমি আপনাকে হাজার হাজার ঘটনার উল্লেখ করতে পারি, অহংকার মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। যদি আপনার মনে কোনো কারণে অহংকার হয়, সাথে সাথে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন। যাঁরা বিনয়ী, সবাই তাঁদের ভালোবাসে। নাক উঁচু মানুষদের কেউ পছন্দ করে না। চলুন, আমরা একটি পরীক্ষা করি। প্রতিটি প্রশ্নের পরে আপনি হ্যাঁ বা না বলে উত্তর দেবেন।
১. আপনি কি নিজেকে অন্যের চেয়ে বেশি বড় মনে করেন? হ্যাঁ বা না
২. নিজেকে নত হতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না
৩. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি রেগে যান? হ্যাঁ বা না
৪. আপনি কি অন্যকে অপমান করেন? হ্যাঁ বা না
৫. আপনি কি আপনার জীবন নিয়ে অসন্তষ্ট বা সব সময় অভিযোগ করেন? হ্যাঁ বা না
৬. অন্য মানুষকে সহ্য করতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না
৭. আপনি কি অন্যদের সাথে মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর ব্যবহার করেন? হ্যাঁ বা না
৮. আপনি কি সব সময়ই তর্কে জেতার চেষ্টা করেন? হ্যাঁ বা না
৯. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়েন? হ্যাঁ বা না
১০. আপনি কি অন্যদের সাথে মারামারি করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকেন? হ্যাঁ বা না
আপনি যতবারই হ্যাঁ বলবেন, বোঝা যাবে আপনি অহংকারী।
‘প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস’-এর লেখিকা জেন অস্টেন বলেছেন, ‘গর্ব আর অহংকার দুটি ভিন্ন জিনিস, যদিও অনেকে এটা গুলিয়ে ফেলে। যে কোনো মানুষই অহংকারী না হয়ে গর্বিত হতে পারে।
গর্ব যেটা আমি আমার নিজের সম্পর্কে ভাবি, আর অহংকার যেটা অন্যরা আমার সম্পর্কে ভাবে।’
ছোট্ট ছেলে প্রচুর পড়াশোনা করে বৃত্তি পেল। মা-বাবাকে বলল, ‘আমি বৃত্তি পেয়েছি।’ এটা হলো গর্ব। মা-বাবা যখন ঢাক পিটিয়ে প্রতিবেশীকে জানান, ‘আমার ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে, ওর চেয়ে মেধাবী ক্লাসে আর নেই।’ এটা হলো অহংকার। গর্ব আর অহংকারের এটাই পার্থক্য।
বিষয়টি শেষ করছি ছোট্ট একটি জোক দিয়ে।
মা রান্নাঘরে রাঁধছেন, ছোট্ট মেয়ে হঠাৎ তাঁর কালো চুলের মধ্যে কয়েকটি সাদা চুল দেখতে পেল। ‘মা মা, দেখেছ তোমার মাথায় সাদা চুল!’ মা মেয়েকে বললেন, ‘আমি যখনই অহংকার করি, আল্লাহ আমার একটি করে চুল পাকিয়ে দেন।’
সুতরাং এ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
ছোট্ট মেয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করল, তারপর বলল,
‘নানির মাথা ভর্তি সাদা চুল, উনি কি খুবই অহংকারী ছিলেন?’
Comments
Post a Comment